গঙ্গার পানি দেখতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা ফারাক্কায়

গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমিশনের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছেছেন। এরপর সোমবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় তারা ফারাক্কায় যান। ভারত সরকারের একটি ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলও একইসঙ্গে ফারাক্কায় উপস্থিত হয়।
এই বৈঠক শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা গঙ্গার পানির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পানিবণ্টন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। ৪ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এই বৈঠক চলবে।
ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি বিশেষজ্ঞদের বৈঠক, যেখানে গঙ্গার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পানিবণ্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৪ মার্চ দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা ফারাক্কায় গঙ্গার পানি সরবরাহ-সহ অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে ৬ ও ৭ মার্চ কলকাতায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। তার আগেই এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, দুই দেশের যৌথ কমিটি গঠন করা হবে, যা চুক্তির নবায়ন প্রক্রিয়ায় কাজ করবে। ২০২৪ সালে ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, এবং বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
এটি ১৯৯৬ সালের পর ৮৬ নম্বর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। আলোচনার কয়েক মাসের মধ্যে ভারতের প্রতিনিধিদলও বাংলাদেশ সফরে আসবেন। গঙ্গায় পানির পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে নতুন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না।
তবে বৈঠক শুধুমাত্র গঙ্গার পানিবণ্টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ৬ মার্চ পানিবণ্টন সংক্রান্ত আলোচনার পাশাপাশি তথ্য ভাগাভাগি, বন্যা রিপোর্ট ও সীমান্ত নদীগুলো নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, দুই দেশের ১২ জন করে সদস্য বৈঠকে অংশ নেবেন।
বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, গঙ্গায় যদি ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকে, তাহলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক এবং বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। যদি পানির পরিমাণ ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক হয়, তাহলে বাংলাদেশ ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাবে, এবং বাকি অংশ ভারত পাবে। তবে পানির পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেকের কম হলে, তা দুই দেশের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন, মোহাম্মদ আবু সইদ, মোহাম্মদ আনোয়ার কাদির, মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, কাজী শাহীদূর রহমান, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। সোমবার তারা কলকাতায় পৌঁছানোর পর শতাব্দী এক্সপ্রেসে করে সন্ধ্যায় ফারাক্কা যান।
ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর আর দেশপাণ্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান এবং ফুলের স্তবক তুলে দেন। ভারতীয় প্রতিনিধিরাও একই ট্রেনে ফারাক্কায় পৌঁছান। রাতের কোনও বৈঠক না হলেও, মঙ্গলবার তারা গঙ্গার পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবেন।
What's Your Reaction?






