শেরপুরে হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু, এলাকায় উত্তেজনা

শেরপুরে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা জাকারিয়া বাদল (৪৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান রুপন ও নিহতের স্বজন রমজান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কী ঘটেছিল?
গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ এলাকায় জাকারিয়া বাদলসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। আহতদের মধ্যে সোহাগ আলম (৩৫) ও রুহুল নামের আরও দুইজন রয়েছেন। গুরুতর আহত সোহাগকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হামলার পেছনের কারণ
নিহতের স্বজন ও ছাত্রদল কর্মী রমজান আলীর দাবি, কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জাকারিয়া বাদলের বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি জেলা বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে এ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। পাশাপাশি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষকলীগ নেতা নূরে আলমের সঙ্গেও বাদলের রাজনৈতিক বৈরিতা ছিল।
রমজান আলী আরও জানান, আধিপত্য বিস্তার ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লুৎফর রহমান শেরপুর জেলা কারাগারে থাকা নূরে আলমের সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীতে নূরে আলমের অনুসারীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন লুৎফর। এরপরই পরিকল্পিতভাবে বাদলের ওপর হামলা চালানো হয়।
হামলার বিবরণ
মঙ্গলবার বিকেলে জাকারিয়া বাদলসহ তিনজন মোটরসাইকেলে করে ভীমগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় ওৎপেতে থাকা প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে বাদল ও সোহাগকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বাদলকে ঢাকায় স্থানান্তরের পথে তার মৃত্যু হয়।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের অবস্থান
শেরপুর জেলা বিএনপির এক সাবেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইউনিয়ন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এ হামলা হয়েছে। কৃষকলীগ নেতা নূরে আলমের অনুসারীরাও এতে যুক্ত ছিল বলে জানা গেছে।”
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, “বাদল আমার দলেরই লোক। আমি কেন তার ওপর হামলা করব? তার অনেক শত্রু রয়েছে, তাদের কেউ হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়েছে।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, “এলাকায় যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
What's Your Reaction?






