বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদের দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছেন বিএনপির নেতা ও সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি ঘোষণা দেন, “আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি বিবেচনায় না নিলে পরবর্তী কর্মসূচি আরও কঠোর হবে।”
গত আট দিন ধরে ইশরাকের সমর্থকরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। তারা দাবি করছিলেন, ২০২৫ সালের স্থানীয় সরকারের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। আন্দোলনের সময় একাধিকবার পুলিশি বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। তবে আন্দোলনকারীরা অনড় ছিলেন তাদের দাবিতে।
এই আট দিনের আন্দোলনের পটভূমিতে ছিল হাইকোর্টে দায়ের করা একটি রিট। সেখানে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটের শুনানি শেষে আদালত সেটি খারিজ করে দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এ রায়ের পর আন্দোলন নতুন মোড় নেয়।
হাইকোর্টের রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক হোসেন লেখেন, “যারা ছাত্র রাজনীতির নামে সংগঠনের ক্ষতি করছেন, তারা এখনো পদে বহাল থাকলে এই আন্দোলন চলবে।” তিনি ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করেন এবং আন্দোলনকারীদের রাস্তায় থাকার নির্দেশ দেন। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিকেলে সরাসরি আন্দোলনস্থলে এসে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
ইশরাক বলেন, “আমরা রাজপথে এসেছি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য। আদালতের রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। কিন্তু এখনো যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা যদি আমাদের সঙ্গে সংলাপে না বসেন এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় সংকট নিরসনে কোনো উদ্যোগ না নেন, তাহলে ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেব।”
তিনি তার বক্তৃতায় আন্দোলনকারী কর্মীদের শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আমাদের সংগ্রাম থেমে যায়নি, শুধু বিরতি নিচ্ছে। দলীয় নেতৃত্ব ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আন্দোলনস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ইশরাকের ঘোষণার পর ধাপে ধাপে স্থান ত্যাগ করতে শুরু করেন। তবে তারা জানান, দলীয় নির্দেশনা পেলেই আবারো রাজপথে ফিরবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইশরাক হোসেনের এই কৌশলগত ‘বিরতি’ দলীয় ভেতরের সংকট নিরসনে ও সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কী সিদ্ধান্ত আসে, সেটিই নির্ধারণ করবে বিএনপি রাজনীতির পরবর্তী গতি-প্রকৃতি।
সব মিলিয়ে, আন্দোলন আপাতত থামলেও উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। এখন সকলের দৃষ্টি আগামী দুই দিনের মধ্যে সরকারের ও দলের ভেতরের নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপের দিকে।
What's Your Reaction?






